এ প্রজন্মের একজোন মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

মিজানুর রহমান রানা
  • ২৬
  • ১৩
একটি দৈনিক পত্রিকায় একজোন বিদেশী ঔপন্যাসিকের সাক্ষাৎকার বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো ইরফান। এই সাহিত্যিকের নাম হারুকি মুরাকামি। তিনি একজোন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং ছোটগল্পকার হিসেবে বেশ সুনাম করেছেন।
ইরফান খুটিয়ে খুটিয়ে পুরো সাক্ষাৎকারটি পড়ে। লেখক এক জায়গায় প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, প্রত্যেক ঔপন্যাসিকের নিজের সৃষ্টির মধ্যে এমোন একটা চরিত্র থাকে যাকে লেখক অন্যরকমভাবে ভালোবাসে। ভালোবেসে সে তার সৃষ্টি-চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ কোরে। তাকে বড়ো কোরে তোলে। হোক সে চরিত্রটা সাধারণ অথবা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক।
ইরফান এ কথাগুলো পড়ে, বার বার পড়ে। এ বয়সে তার কেনো জানি মনে হচ্ছে তার জীবনটাও একটা উপন্যাস হোতে পারতো, যদি সে একজোন লেখক হতো। একজোন লেখক চরিত্র সৃষ্টি করেন তার চেনাজানা পরিচিতি পরিবেশ থেকেই। আশেপাশে যা ঘটে বা ভবিষ্যতে যা ঘটবে এর সবকিছুই লেখক দেখেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। আর এ দৃষ্টির গভীরে থাকে স্বপ্নের আনাগোনা। একজোন লেখক জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায়ও স্বপ্ন দেখেন। তিনি মানুষের চেতনার গভীরে প্রবেশ কোরে মানুষের মনন ও চিন্তাকে খুঁজে বের কোরে সে উপাদান নিয়ে রচনা করেন সাহিত্য।
ভাবনার জাল চিহ্ন কোরে হারুকি মুরাকামির সাক্ষাৎকারটি কয়েকবার পাঠ কোরে ইরফান পত্রিকাটি ভাঁজ কোরে রেখে দেয় পাশের টেবিলে।
মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। ফ্যানের বাতাসে হঠাৎ কোরেই পত্রিকাটি উল্টাতে থাকে। উল্টাতে উল্টাতে পড়ে যায় ফ্লোরে। ইরফান পত্রিকাটি তুলতে গিয়ে ভাঁজ খুলে যাওয়া ভেতরের পৃষ্ঠার একটি বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায়। বিজ্ঞাপনে তার কন্যা নিশির আদলে একটি মেয়ের মুখ।
বিষয়টা বিশ্বাস না হওয়ায় তা ভালোভাবে দেখার জন্যে চশমাটার খোঁজ করলো সে। না পেয়ে অনন্যাকে জানালো চশমাটা আনার জন্যে।
চশমা নিয়ে এগিয়ে এলো অনন্যা। ইরফান চশমাটা চোখে লাগিয়ে বিজ্ঞাপণটার দিকে তাকিয়ে পুরোটা না পড়েই বললো, 'অনন্যা দেখো। এই মেয়েটিকে বহু বছর আগে নাকি পাওয়া গেছে। ঠিক যেনো আমাদের নিশির মতো।'
অনন্যা দ্রুত বিজ্ঞাপণটা পড়ে চিৎকার কোরে ওঠলো। তারপর বললো, 'এ যে আমাদেরই হারিয়ে যাওয়া নিশি।'
দ্রুতবেগে ইরফানও নজর বুলালো পুরো বিজ্ঞাপণটায়। চশমার কাঁচ দিয়ে দেখলো পরিষ্কার লেখা রয়েছে, 'মেয়েটির নাম নিশি। এক লঞ্চ দুর্ঘটনার পর তাকে পাওয়া গেছে বহুবছর আগে। স্মৃতি বিস্মৃত থাকায় এতোদিন সে তার নাম ও ঠিকানা বলতে পারেনি। তার স্মৃতি ফিরে এসেছে। সে শুধু তার নাম বলতে পেরেছে। তার পিতা একজন স্কুল মাস্টার, মা ডাক্তার। প্রকৃত অভিভাবকদেরকে যোগাযোগ করার জন্যে বলা হলো।'
নিচে একটা মুঠোফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। এ নাম্বারে কল করলো ইরফান। অপরপ্রান্ত থেকে একজন মহিলা ফোন ধরলো। তার কাছ থেকে ঠিকানা সংগ্রহ কোরলো ইরফান।
সাথে সাথেই ঢাকা থেকে কুমিল্লার পথে রওয়ানা হলো ইরফান। সঙ্গে অনন্যা, ইমতিয়াজ ও তুষার আহমেদ। কুমিল্লায় এসে অনেক খুঁজে হামিদ নামে লোকটার বাড়িটা বের কোরলো ইরফান।
হামিদের বাড়ি কোর্টবাড়ি টিচারর্স ট্রেনিং কলেজের পেছনে। সেখানে গিয়ে তার খোঁজ কোরতেই একজন দেখিয়ে দিলো বাড়িটা।
ঘরের সামনে একজোন পৌঢ় লোক বসে আছেন। মুখে দাঁড়ি, মাথায় লম্বা টুপি। ইরফানসহ সবাইকে দেখে সে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম জানালো। তারপর এসে জড়িয়ে ধরলো ইরফানকে। ঘটনার আকস্মিকতায় ইরফান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়। সে জানতে চায় হামিদ নামক লোকটি বাড়ি আছে কি-না।
'আমিই হামিদ। আমার পুরো নাম হামিদ বেপারী।' লোকটি বলে। তারপর প্রশ্ন কোরে, 'কমান্ডার, আপনি আমাকে চিনতে পারেননি?'
ইরফান অবাক। আর এতো বছর পর লোকটির মুখে 'কমান্ডার' সম্বোধন শুনে সে তাকিয়ে থাকে অবাক নয়নে। কিছুই বুঝে ওঠতে পারে না। অনন্যা এগিয়ে আসে। হামিদ বেপারী বলে, 'অনন্যা আপনি?'
'আরে, আপনি তো আমাদের হামিদ বেপারী। মুক্তিযোদ্ধা হামিদ বেপারী। বয়স হয়েছে, চুল-দাঁড়ি পাক ধরেছে। শরীর ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে এতো বছর পর দেখে চেনার কোনো উপায় আছে বলুন?'
এবার ইরফান বুঝতে পারে লোকটি তাদের সহযোদ্ধা হামিদ বেপারী। সে হামিদ বেপারীকে জড়িয়ে ধরে বলে, 'তাহলে তুমিই সেই হামিদ ওরফে হামিদ বেপারী। তুমিই তাহলে আমার কন্যা নিশিকে পেয়েছো?'
'জি্ব, ইরফান ভাই। এই কমবখতের জন্যে সে সুযোগ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ্তায়ালা। তার লীলাখেলায় আপনার কন্যা নিশি আমার ঘরকে আলোকিত করেছে বেশ ক'টা বছর।'
ইরফান কিছু বলতে যাবে, এমোন সময় ঘরের ভেতর থেকে জামিলা বেগমসহ বেরিয়ে আসে নিশি। ইরফান, অনন্যা, ইমতিয়াজ, তুষার তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে প্রাপ্তির মহাউল্লাসে।

সেদিন আর ইরফানদের ঢাকায় ফিরতে দেয়নি হামিদ বেপারী। বাজার থেকে বড় বড় মাছ আর তাজা গোশত এনে রান্না কোরে তাদের খাওয়ায়।
রাতে হামিদ বেপারীর ঘরে যেনো মেলা বসে। স্মৃতিচারণ কোরতে থাকে হামিদ বেপারী। কীভাবে নিশিকে উদ্ধার কোরে। তারপর অপারেশন কোরতে গিয়ে জমি-জমা বিক্রি কোরে। অপারেশনের পর নিশির স্মৃতিবিভ্রম। এরপর তার পড়াশুনার সাফল্য সবকিছু। এসব গল্প শুনে ইরফান, অনন্যাসহ সবাই।
ইরফানের চোখে অশ্রু জমায়েত হয়। অনন্যা সব শুনে কাঁদে। হামিদ বেপারীর জন্যে তাদের হৃদয়ের অর্গল খুলে সেখানে ভালোবাসার একটা ঘর তৈরি হয়।
ইরফান বলে, 'তুমি সত্যিই একজোন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। পড়াশুনা করেও মানুষ যা অর্জন কোরতে পারে না। প্রকৃতির কাছ থেকে তুমি তার চেয়েও বেশি কিছু অনুভব কোরেছো। প্রকৃতি মানুষের বড় শিক্ষালয়। তোমার এ ত্যাগ কোনোদিন ভুলে যাবার মতো নয়।'
হামিদ বেপারী লজ্জিত হয়। বলে, 'ইরফান ভাই। এটা তো স্রষ্টার লীলা মাত্র। সেদিন সেই লঞ্চে আমার আসার কথা ছিলো না। হঠাৎ কোরেই এক দেনাদারের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। এটাও আল্লাহর মর্জি। আর আপনার কন্যা নিশিকে পাওয়াটাও আল্লাহর মর্জি। আল্লাহ হয়তো এভাবেই লিখে রেখেছিলেন আমাদের মিলনের ক্ষেত্র। আমরা তাই প্রায় শেষ বয়সে একত্রিত হলাম। আপনাদের পেয়ে আমার মনে হচ্ছে স্বর্গ ভূতলে নেমে এসেছে।'
হামিদ বেপারীর চোখে অশ্রু জমা হলো। হামিদ বেপারী অনুভব কোরে সেই অশ্রু ভীষণ আনন্দের। এ আনন্দ বলে কয়ে কখনো আসে না।



দুই.
কোলকাতা থেকে প্লেনে কোরে রাজধানী ঢাকায় এসে নামে তাপস। তারপর সায়েদাবাদে চাঁদপুরের বাসে ওঠার আগে দেখেশুনে একখানা দা কিনে ট্রাভেল ব্যাগে ভরে।
বাসভর্তি মানুষ। তাপস তার আসনে বসতে গিয়ে দেখে একজোন বয়স্ক মানুষ সেখানে বসে আছে। পাশে ১০/১২ বছরের একটি শিশু বসে আছে। তাপস বিনীতভাবে লোকটিকে জানালো এই সিটটা তার। লোকটি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। শিশুটিকে কোলে নিয়ে তাপসের সিটটি খালি কোরে দিলো। তাপস লোকটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসন গ্রহণ করলো।
নির্দিষ্ট সময়ে বাস চলতে থাকে। ঢাকার রাস্তার অবস্থা ভালো নয়। কাঁচপুর পর্যন্ত যথেষ্ট জ্যাম। এক মিনিট চলে তো পাঁচ মিনিট থামে। তাপস অসহ্য বোধ করে। এভাবে চলতে চলতে বাস কুমিল্লা এসে একটি রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। ড্রাইভার জানায় এখানে ১৫ মিনিট যাত্রাবিরতী হবে। যাত্রীরা ইচ্ছে করলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে পারেন। পাশে বসা ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। তাপসও দাঁড়ালো। তারা নেমে রেস্তেরাঁয় বসে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলো।
বাস ছাড়ার আগে সবাই আসন গ্রহণ কোরলো। পাশে বসা ভদ্রলোক জানতে চাইলো তাপস কোথায় যাবে। তাপস জানালো সে হাজীগঞ্জ নেমে যাবে। লোকটিও জানালো সে হাজীগঞ্জ নামবে।
এভাবে দু'জনের মধ্যে পরিচয়ের পর্বে লোকটি জানতে চাইলো তাপস হাজীগঞ্জ নেমে কোথায় যাবে। তাপস জানালো সে ওখানে একটি কাজে এসেছে। কাজ সেরে আবার চলে যাবে ঢাকায়। তাপস লোকটির কাছে জানতে চায় সে কোথায় যাবে।
লোকটি জানালো হাজীগঞ্জের পাশর্্ববতর্ী একটি গ্রামে যাবে।
তাপস তার পরিচয় জানতে চায়।
লোকটি জানায় তার নাম ঋষি অনির্বাণ।
কথাটি শোনামাত্র যেনো বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয় তাপস। তার মনে হয় এই নামটি সে কোথায়ও শুনেছে। সে মনে কোরতে চায়, কিন্তু পারে না। তাপস জানতে চায়, লোকটি মুক্তিযোদ্ধা কি-না।
ঋষি অবাক নয়নে তাকায় তাপসের দিকে। প্রশ্ন কোরে, 'কেনো?'
তাপস জানায়, 'দেখুন আমি সম্ভবত আমার মায়ের কাছে এই নামটি অনেকবার শুনেছি। তাই মনে হলো ওই নামটির সাথে আপনার নামের কোনো যোগসূত্র আছে কি-না। তাই জিজ্ঞেস করেছি।'
'আমার মায়ের নাম কী?'
'সবিতা।'
এবার ঋষিও বিদুৎস্পৃষ্ট হলো যেনো। বললো, 'আপনার মা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদের সাথেই যুদ্ধ করেছেন। উনিই আপনার মা?'
'জি্ব।'
'তিনি এখোন কোথায় আছেন?'
'তিনি স্বাধীনতার পর কলকাতায় চলে গেছেন। আমার জন্মের পর তিনি পরলোক গমন করেছেন।'
'আপনার বাবা বেঁচে আছেন? তিনি কী করেন?'
তাপস কোনো উত্তর দিলো না। চুপ কোরে থাকলো।
ঋষি আবার তাকায় তাপসের দিকে। তারপর বলে, 'কী কথা বলছেন না যে?'
'আমার বাবা?' হাসলো তাপস। 'বাবা ছাড়াও পৃথিবীতে মানুষ হয় সেকথা আপনি জানেন না? যীশুর কথা জানেন?'
ঋষি কোনো উত্তর দিতে পারে না। এবার তার মনে পড়ে যায় যুদ্ধের সময়কার কথা। সবিতাকে তারা উদ্ধার করেছিলো রাজাকার বাচ্চুর ক্যাম্প থেকে। সে তাকিয়ে থাকে তাপসের দিকে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে তাপসের বুকে বুক মিলায়। তারপর কানে কানে আস্তে আস্তে বলে, 'হঁ্যা, যীশুকে আমি জানি, এই তো আমার সামনেই সেই মহান যীশু ছদ্মবেশে দাঁড়িয়ে আছে।'
তাপস কিছু বলে না। দু'জনেই পাশাপাশি বসে মৌণতায় আচ্ছন্ন থাকে। এক সময় তাপস জিজ্ঞেস কোরে, 'আপনার বাড়ি কি ওখানে?'
'না। আমার বাড়ি খুলনা।' উত্তর দেয় ঋষি।
'তাহলে হাজীগঞ্জ যাচ্ছেন কেনো?'
'যুদ্ধের সময়কার আমাদের এক সহযোদ্ধা অপর্ণাকে কিছুদিন আগে স্বপ্নে দেখেছি। তার কবরটা জিয়ারত কোরতে যাচ্ছি। তাছাড়া আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার কবরটা আবিষ্কার কোরে সারাজীবন সেখানেই থাকবো। ওই কবরটার জন্যে খুব মায়া লাগছে।' কিছুক্ষণ থেমে যেনো স্বগোতোক্তি করলো ঋষি, 'মায়া-মমতা বড়ই নিষ্ঠুর বিষয়। মায়া মানুষকে নিয়ে যায় তার অজানা গন্তব্যে। যে গন্তব্যের কথা মানুষ কিছুই জানে না। আমিও সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। জানি না আমার শেষ ঠিকানা কোথায়।'
'আপনার মধ্যে দারুণ হতাশা আছে। আমার মায়ের মধ্যেও সেই হতাশা কাজ করছিলো শেষ সময়। হতাশার যন্ত্রণা মানুষকে হত্যা কোরে তিলে তিলে। আমার মাকেও সেই হতাশার নীল যন্ত্রণা ছোবল মেরে নিয়ে গেছে।'
গভীর একটা নিঃশ্বাস ছাড়ালো ঋষি। তারপর বললো, 'আমিও আমার যন্ত্রণায় ভুগছি। মৃতু্য ছাড়া এ যন্ত্রণা কখনো লাঘব হবার নয়। আমিও তার জন্যেই অপেক্ষা করছি। তবে শেষ সময়টা অপর্ণার সাথে কথা বলে বলে কাটিয়ে যেতে চাই। ও ছাড়া এখোন আমার কথা বলার মতো কেউ নেই।'
'তিনি তো মৃত। মৃতদের সাথে কীভাবে কথা বলা?' অবাক হয় তাপস।
'হঁ্যা, আমি মৃতদের সাথে কথা বলতে জানি। আমি চাইলেই অপর্ণা এসে হাজির হয়। আমি তার সাথে কথা বলি।'
তাপস অবাক হয়। মনে মনে ভাবে পৃথিবীতে হাজার কিসিমের সাধক মানুষ আছে। এ মানুষটিও হয়তো সেই সাধনার কোনো একটি দিক নিয়ে কাজ কোরছে। সাধনায় সিদ্ধিলাভ। যে যাকে সাধনা কোরে স্বপ্নেও সে তাকেই দেখে। লোকটির ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হচ্ছে।
লোকটি মায়ায় আবদ্ধ। মায়ার ছায়ার প্রতিবিম্ব তাকে আচ্ছাদিত কোরে রেখেছে। সেই ছায়া তার মনের মধ্যে ক্রমে ক্রমে রেখাপাত কোরে চলছে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। পৃথিবীটা তো মায়ারই খেলা। সমাজ-সংসারের এক অপূর্ব মায়ার খেলায় বেঁচে থাকে মানুষ। মায়া ছাড়া পৃথিবীটা অর্থহীন।

প্রায় চারঘণ্টা বাসভ্রমণ কোরে রাত আটটায় হাজীগঞ্জ বাজারে এসে বাস থেকে নামলো ওরা। ঋষির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হলো তাপস।
তাপসের কাঁধে একটা ছোট ট্রাভেল ব্যাগ। সে তার গন্তব্য জানে। কিন্তু জায়গাটা চিনে না। বাজারের লোকজনকে হাজী বাচ্চুর বাড়ি জিজ্ঞাসা কোরতেই তারা বললো, 'হাজী সাহেবের বাড়ি? ওই তো সামনেই। একটু সামনে এগিয়ে যান। বাড়ির সামনে একটা ছোট টংঘর আছে। সেখানে গিয়া জিজ্ঞাসা কোরলেই তারা দেখাইয়া দিবো।'
তাপস হাঁটতে থাকে। চারদিক অন্ধকার। অন্ধকারে কিছুক্ষণ হাঁটার পর সেই টংঘরের সামনে আসে। সেখানে একটা ছোট চায়ের দোকান। ওই দোকানে একজোন বুড়ো কিসিমের লোক বসে বসে ঝিমুচ্ছে।
গ্রাম্য রাস্তার পাশেই চায়ের দোকানটি। আশেপাশে কোনো লোকজন নেই। একাই দোকানে বসে আছে বুড়ো মিয়া। তাকে সালাম জানাতেই তার ঝিমুনি থামলো। চোখ রগড়িয়ে প্রশ্ন কোরলো, 'চা খাইবেন?'
'না, একটা গোল্ডলিফ দিন।'
বুড়ো মিয়া তাপসকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের কোরে দেয়। তারপর বলে, 'দাম বাইড়া গ্যাছে।'
তাপস কোনো কথা বলে না। সে জানে বাংলাদেশে দু'দিন পর পরই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সেটা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত আর কমে না। আর কোলকাতায় জিনিসপত্রের দাম সামান্য বাড়লেই অনশন, ধর্মঘট। অচল হয়ে যায় প্রদেশ। ফলে সেখানে কোনোকিছুর দাম সহজেই বাড়তে পারে না।
কলকাতার মানুষ তাপস। বাংলাদেশে তার এই প্রথম আগমন। সে জানে এটাই তার প্রথম আগমন এবং কালই হবে তার শেষ যাত্রা। কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে সে আর কখনোই এদেশে আসবে না।
বসে বসে ভাবছে আর সিগারেট টানছে তাপস। বুড়ো মিয়া প্রশ্ন কোরে, 'কুথায় যাইবেন?'
'বাচ্চুর বাড়িতে।'
'বাচ্চু হাজী সাহেবের বাড়ি?'
'জি্ব।'
'ওই তো সামনেই।' আঙ্গুল তুলে দেখায় বুড়া মিয়া। 'আপনে তার কী হন?'
'কিছু না। ওনাকে দেখতে এসেছি। হাজী মানুষ, ওনাকে দেখলেও নাকি পাপমোচন হয়?'
হাসে বুড়ো মিয়া। তারপর বলে, 'আপনে মোনে অয় এই অঞ্চলের মানুষ না। হের লাইগাই জানেন না। এখোন তেনায় হাজী হইছে। হাজার হাজার মানুষ মারছে সংগ্রামের সুমায়। অহোন হজ্ব কইরা দাড়ি রাইখ্যা এক্কেবারে বোম্বাই হাজী!'
'তাই নাকি! তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন?'
'মুক্তিযোদ্ধা!' পানের পিক ফেলার মতো থু থু ফেলেন বুড়া মিয়া। 'লোকটা আছিলো সাক্ষাৎ শয়তান। আমি দেখছি। যুদ্ধের সুমায় কতো কতো জোয়ান জোয়ান মাইয়াগোরে ন্যাংটা-বিবস্ত্র কইরা ওগো ইজ্জট লুটছে হারামজাদা। আমি ওই সুমায় নৌকার মাঝি আছিলাম। আমার নৌকায় কইরা কতো সুন্দর সুন্দর মাইয়া জোর কইরা নিয়া আইছে।'
'তাই। আচ্ছা আপনি সবিতা নামে এখানকার কাউরে চিনেন?'
বুড়ো মিয়া তার স্মৃতির অতলে কিছুক্ষণ হাতড়ায়। অনেকক্ষণ হাতড়ে হাতড়ে তারপর চুপ কোরে তাকিয়ে থাকে তাপসের দিকে। তারপর বলে, 'হ, চিনি। ওই তো ওই বাড়িটাই তাগো আছিলো। যুদ্ধের সুমায় রাজাকার বাচ্চু ওগো পুরা বাড়িটা জ্বালাইয়া দিয়া, তার বাবা-মাসহ সবাইরে মাইরা সবিতারে ধইরা নিয়া যায়। এরপর তারে ক্যাম্পে নিয়া নির্যাতন কোরে। পরে হুনছি যুদ্ধের পর সবিতার একটা বাচ্চা অইছে। সেই বাচ্চা নিয়া হেয় কলকাতা চইলা গ্যাছে।'
'কলকাতা গেছে কেনো?' উৎসুক শ্রোতার মতো প্রশ্ন কোরে তাপস।
'আরে মিয়া, যাইবো না তো কী কোরবো? এহানকার মানুষ কোনু জারো বাচ্চা নিয়া কাউরে গেরামে থাকতি দিবো? ওরাই সবিতারে খেদাইয়া দিছে বাড়ি থাইক্কা। বেচারা কী করবো, স্বাধীনতার পর কোনুহানে জায়গা না পাইয়া হুনছি কোলকাতায় হের মামার কাছে চইলা গ্যাছে।'
'ওহ, আচ্ছা।' তাপসের সিগারেট পান শেষ হয়। নিরাসক্তের মতো সে বুড়া মিয়াকে বলে, 'সবিতাদের বাড়িতে এখোন কে থাকে?'
'কে আর থাকপো। বাচ্চু হাজী সব দখোল কইরা নিচে। যুদ্ধ শ্যাষ অওনের পর ওই লোকটা এলাকা ছাইড়া চইলা গেছিল। ছয় বছর পর একদিন বেহান রাইতে আবার বাড়িতে আহে। মানুষজন সকালে হেরে দেইখ্যা খেইপ্যা যায়। সবাই মিল্যা বাচ্চুরে খুব মারে। পুলিশ আইয়া অ্যারেস্ট কইরা তারে নিয়া যায়। ক'বছর জেলে থাহনের পর এক সেনাশাসক ক্ষেমতায় আইয়া হেরে মুক্তি দিয়া দেয়। মুক্তি পাইয়া বাচ্চুর ক্ষেমতা বাড়ে। থানার লোকজন হেরে মান্যগুনি্ন কোরে। সাহায্য-সহযোগিতা কোরে। এই সুমায় সে বিয়া করে চার-পাঁচটা। হুনছি রাজনীতিও কোরে বাচ্চু। রাজনৈতিক লোকেরা হেরে পৌরসভার কমিশনার বানায়। কমিশনার হইয়া এলাকায় আবার সন্ত্রাসী কায়কারবার শুরু কোরে বাচ্চু। অনেক টাকার মালিক হয়। একদিন সুযোগ বুইজা মক্কায় গিয়া হজ্ব কইরা এখোন হাজী অইয়া তসবি গোণে আর খায়। আহারে সারাডা জীবন কুনু অন্যায় কোরলাম না, আর আল্লায় আমারে ওই পবিত্র জায়গাডা দেহাইলো না।' একটা নিঃশ্বাস ফেলে বুড়া মিয়া।
বুড়া মিয়ার সে নিঃশ্বাস তাপসের বুকে এসে আঘাত কোরে গাছের ঝরাপাতা বিসর্জনের মতো কিছু দুঃখ, কষ্ট ও পুরোনো কথা বের কোরে আনে। সে পুরোনো কথা হচ্ছে, তাপস জানে সে একজোন জারজ সন্তান। এই জানাটা তার মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত নয়। মা তাকে জন্ম দিয়ে মারা গেছে বাল্যকালেই। সে বড়ো হয়েছে মায়ের পিতার কাছে। মায়ের মৃতু্যর অনেক পরে তাপস যখোন বুঝ-জ্ঞান প্রাপ্ত হয় তখোন সে দাদুর কাছে জানতে পারে তার জীবন রহস্যের সব কথা। জানতে পারে রাজাকার বাচ্চুর কথা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক নির্যাতন ক্যাম্পে রাজাকার বাচ্চু কতর্ৃক মা সবিতাকে নির্যাতনের কথা সে দাদুর কাছ থেকেই জানতে পারে। দাদু তাকে বলে, 'তোমার জন্ম ইতিহাস জানা প্রয়োজন। তা না হলে তুমি একটা প্রকৃত সত্য থেকে বিচু্যত হবে। সত্যবিচ্ছিন্ন মানুষ সঠিক পথের দিশা পেতে পারে না। তোমার জীবনের প্রকৃত সত্য তুমি জেনে নাও এবং সেই সত্যের পথ ধরে তুমি কোথায় যাবে, কী করবে সেটা তোমার এখতিয়ার।'
একটু থেমে কী যেনো ভেবে আবার বললেন দাদু, 'প্রকৃত সত্য না জেনে কোনো মানুষ মিথ্যায় আবদ্ধ থাকলে তার জীবনটাই অর্থহীন।'
দাদুর কাছ থেকে এসব সত্য জেনে তাপস মায়ের জন্যে বুকের মধ্যে একটা ব্যথা অনুভব করে। দিনের পর দিন সেই ব্যথাটা বেড়ে ক্রমে ক্রমে নীলাকার ধারণ কোরে।
তাপস নীল যন্ত্রণায় দংশিত হতে থাকে মাসের পর মাস, বছর ধরে। কী কোরবে ভেবে পায়নি সে। যখোন যেখানেই যায়, সেই নীল যন্ত্রণা তাকে উসকে দেয় কঠিন একটা সিদ্ধান্তের দিকে। সে আর সহ্য কোরতে পারে না।
অনেকদিন পর সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোরে এবং সেই সিদ্ধান্তের পরিণতির জন্যে সে ততোদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে আগমন করে না, যতোদিনে সে রাজাকার বাচ্চুর মুখোমুখি হতে পারবে না। যখোন মনে হলো সে বাচ্চুর মুখোমুখি হতে পারবে তখোন আর দেরি করেনি। চলে এসেছে এ দেশে। তার সিদ্ধান্ত ডু অর ডাই। মারো অথবা মরো। দুটোর একটা।

ভাচর্ুয়াল জগতে চিন্তায় বিভোর তাপসের হাতের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। পৃথিবীতে যখোন তার চিন্তা চেতনা আবার ফিরে আসে তখোন সে নিজেকে আবিষ্কার কোরে বুড়ো মিয়ার চায়ের দোকানে। এতোক্ষণ তার হাতে ধরা সিগারেটটা জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছিলো আর সে ভাবনার জগতে বিচরণ করছিলো। বুড়া মিয়ার কথার আওয়াজে সে চমকে ওঠে। বুড়া মিয়া বলে, 'কী হইছে? কি ভাবতাছেন?'
'না কিছু না। ভাবছি বাচ্চু হাজীকে বাড়িতে পাওয়া যাবে কি-না।' প্রশ্ন কোরে তাপস।
'পাইবেন, পাইবেন। গেলেই পাইবেন। বাড়িতেই আছে। চারডা বৌ নিয়া বুড়া বয়সেও রঙের হাট বসাইছে।' বুড়া মিয়া কবিতার ভাষায় ইষৎ হেসে উত্তর দেয়।
বুড়া মিয়ার সাথে কথা শেষ কোরে তাপস বসা থেকে উঠে। তারপর সিগারেটের দাম শোধ করে সামনে পা বাড়ায়।

রাত প্রায় দশটা। চারদিকে নীরব-নিস্তব্ধ। বিদু্যতের আলোহীন গ্রামে এই সময় গভীর রাত মনে হয়। ঠকঠক দরোজায় আওয়াজ হয়। বাচ্চু রাজাকার ওরফে বাচ্চু হাজীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাশের রুমে তার ছোট বউটা ঘুমাচ্ছে। সে উঠে বাতি জ্বালায়, তারপর দরোজা খুলে দেয়। দরজা খুলে আগন্তুককে দেখে প্রশ্ন কোরে, 'কার কাছে আইছেন।'
আলো-অন্ধকারে আগন্তুক তাকায় বাচ্চু মিয়ার দিকে। লোকটার বয়স এখোন পঁয়ষট্টি-সাতষট্টির মতো হবে। মাথার চুল ও দাঁড়ি পেকে সাদা হয়ে গেছে। চেহারা-সুরতে একদোম পাক্কা হাজী। অজানা-অচেনা যে কেউ দেখলে মনে করবে, এই লোকটি সাক্ষাৎ ফেরেশতা।
'আপনি হাজী বাচ্চু মিয়া না?' প্রশ্ন কোরে আগন্তুক।
'জি্ব।' বড় বিনয় কোরে উত্তর দেয় বাচ্চু।
'আমার নাম তাপস। আমি ঢাকা থেকে এসেছি। শুনছি আপনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। একজোন নামকরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আপনি। তাই আপনাকে নিয়ে একটা বই লিখবো বলে এসেছি।'
খুব খুশি হয় বাচ্চু। বিনয়ের অবতারের মতো বলে, 'আপনারে কি ওসমান ভাই পাঠাইছে? ওসমান ভাই কইছিলো মুক্তিযুদ্ধে আমার অবদান নিয়া একটা বই লিখবো। একজোন লোক পাঠাইবো আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।'
'জি্ব। ওসমান ভাই-ই পাঠাইছে।'
'তাহলে আসুন গরিবখানায়। আপনার জন্যই আমি অপেক্ষা করতাছি।' তাপসকে সসম্মানে আমন্ত্রণ জানায় বাচ্চু।

সেই রাতে বাচ্চু হাজী তার চার বউকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বেশ রান্নাবান্না কোরে তাপসকে খাওয়ায়। আরাম কোরে খেয়েদেয়ে নানা কথা বলতে বলতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। বাচ্চুর পাশের কক্ষেই শুতে দেয়া হয় তাপসকে। বেশ যত্ন-আত্তি কোরে ঘুমানোর আগে বাচ্চু হাজী তাপসের বিছানাপত্র ঠিক কোরে দেয় আর বলে, 'সকালে উইঠা নাস্তা খায়া আমার সাক্ষাৎকার নিবেন। ছবি তুলবেন। ক্যামেরা আনছেন?'
'জি্ব। আনছি।' ট্রাভেল ব্যাগটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় তাপস।
বাচ্চু খুশি হয়। খুশিতে তার চোখ চকচক করে ওঠে। সে ভাবে যুদ্ধের সময় যা করেছি, করেছি। এখোন হাজী হইছি। আল্লায় আমারে মাফ কইরা দিছে। মরণের পরে যাতে আমারে মানুষ ভালা কয়, তার জন্য 'মুক্তিযুদ্ধে হাজী বাচ্চুর অবদান' নামক একখানা বই লেখাইয়া যাইতে পারলেই জীবন সার্থক। তার বন্ধু ওসমানের সাথে কথা হয়েছে। সে একটি বইয়ের প্রকাশনীর মালিক। তাকে দু'লাখ টাকা দিতে হবে এই বইটির জন্য। সে একজোন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বাচ্চুকে উল্লেখ কোরে বইটি ছাপিয়ে দিবে। যাক দু'লাখ। মন্দ কী। ভাবে বাচ্চু। তারপর প্রসন্নচিত্তে ঘুমিয়ে যায় ভোরের অপেক্ষায়।

রাত প্রায় সাড়ে তিনটা। বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছে। একজোন মানুষের চোখে ঘুম নেই। আর সেই লোকটার নাম হচ্ছে তাপস।
তাপস একটা মিশন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এই মিশন পরিপূর্ণ কোরে পরদিন সকালেই সে ফিরে যাবে ঢাকায়। তারপর সেখান থেকে ওইদিনই চলে যাবে কোলকাতা।
হাতঘড়িটা আবারও দেখলো তাপস। রাত প্রায় পৌণে চারটা। বিছানা থেকে উঠে জামা কাপড় পরলো সে। তারপর ট্রাভেল ব্যাগটা খুলে চকচকে মাঝারি একটা দা বের করলো সে। অন্ধকারে দা-টি চকচক করে ওঠলো।
এই দা দিয়ে এর আগে মানুষ হত্যা তো দূরের কথা কিছুই করা হয়নি। সদ্য কেনা এটি। আজ এই দা দিয়ে এক প্রজন্মের দায়ভার লাঘব হবে। তাপস এই দিনটার জন্যে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছে। তাই এই কাজে কোনো ভুল হলে চলবে না।
আস্তে আস্তে নিজের কক্ষের দরোজা খোলে তাপস। তারপর পাশের কক্ষে নিদ্রারত বাচ্চুর কক্ষের দরোজা সামান্য ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। বা হাতে ছোট একটা টর্চ, ডান হাতে চকচকে দা। সামান্য আলো ফেলে বাচ্চুর মাথার কাছে চলে আসে তাপস। হঠাৎ কোরেই আলো-অন্ধকারে কিসের আওয়াজ হয়। বাচ্চুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানা থেকে উঠে বসে। মৃদু টর্চের আলোয় তাপসের মুখ এবং হাতে চকচকে দা দেখে চিৎকার করার আগেই দ্রুত তার মুখে চাপা দেয় তাপস।
এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে তার বুকের ওপর উঠে বসে সে। তারপর এক পা দিয়ে বাচ্চুর মুখে চাপা দিয়ে ফিসফিস কোরে বলে, 'আমার নাম তাপস। আমি সবিতার সন্তান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তুমি আমার মাকে বিবস্ত্র করেছিলো, বিবস্ত্র করতে চেয়েছিলে এই দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকেও। একটা জারজ হিসেবে জন্ম দিয়েছিলে আমায়। দেখো সেই জারজ এখোন বড়ো হয়েছে। বড় হোতে হোতে তোমার মৃতু্যর ঘণ্টার সমান হয়ে গেছে। সে আজ এখোন তোমার মৃতুঘণ্টা বাজাবে।'
ঘটনার আকস্মিকতায় বাচ্চু হতভম্ব হয়ে যায়।
তাপস বাচ্চুর মুখে টর্চের আলো ফেলে। বিস্ফোরিত নেত্রে সে তাকিয়ে থাকে আলোর বিপরীতে অন্ধকারাচ্ছন্ন তাপসের অবয়বের দিকে। সে স্পষ্টভাবে তাপসের মুখটা দেখতে পায় না। দেখে তার বুকে উঠে বসে আছে এক মৃতু্যদূত।
তাপস আর দেরি কোরে না। সে জানে দেরি কোরলে মানুষের প্রতি মানুষের স্বভাবজাত মায়া-মমতা এসে যেতে পারে তার অন্তরে। তখোন সে ব্যর্থ হবে কর্তব্যকাজে। তাই সে বাচ্চুর মুখ থেকে দ্রুত পা সরিয়ে দা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে আঘাত কোরে বাচ্চু রাজাকারের ঘাড়ে। মুহূর্তেই বাচ্চুর ঘাড় থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রক্তের ধারা বইতে থাকে দামী বিছানার ওপর।
বাচ্চুর মস্তক বিচ্ছিন্ন দেহটা সাপের মতো মোড়ামুড়ি কোরে খাটের ওপর। এভাবে কিছুক্ষণ নড়াচড়া কোরে এক সময় স্থির হোয়ে যায়।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তাপস। তার বুকের নীল যন্ত্রণার পাহাড় সেই দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে মুহূর্তেই সরে যায় ধাবমান কালো মেঘের মতো। বুকভরে শ্বাস নেয় সে। মনে মনে বলে, আহ্ কী শান্তি। সমাজের একটা বিষবাষ্পকে নিজ হাতে সরিয়ে দিলাম। এ অমানুষটা বিবস্ত্র করেছে এদেশের নারীদেরকে, বিবস্ত্র করেছে মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন-সাধকে। আজ সেই কালকেউটে সাপটাকে নীল যন্ত্রণার ছোবলে ভূতলে শায়িত কোরলাম আমি। যাকে এদেশের শাসনকর্তারা দীর্ঘদিনেও বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মারা যার জন্যে স্বর্গে পেঁৗছতে বিলম্ব কোরছে সে অমানুষটাকে আজ আমি নিজ হাতে খুন কোরে প্রজন্মের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। জানি, আমি নিজেও একটা অপরাধ কোরেছি। কিন্তু ওই লোকটার চেয়ে আমার এ একটি অপরাধ নেহায়েত নগণ্য। হাজার অপরাধে অপরাধী একটামাত্র মানুষকে হত্যা করার অপরাধ আর কতোটুকুই হবে? ভাবতে থাকে তাপস।
হঠাৎ কোরেই টিনের চালে ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবলীলা অনুভব কোরে তাপস। শুরু হোয়ে যায় দমকা বাতাসের প্রলয়নৃত্য। কাঁপতে থাকে পৃথিবী। তাপস আর দেরি কোরে না। রক্তাক্ত দা'টি বাইরের বৃষ্টির পানি দিয়ে ধুয়ে ট্রাভেল ব্যাগে ভরে ধীরে ধীরে ঘরের দরোজা বন্ধ কোরে হারিয়ে যায় অন্ধকারের মাঝে। তারপর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পথ চলতে থাকে একা, একদম একা।
এমোন সময় পাশের কোনো মসজিদে আজান হয় ... আল্লাহু আকবর ... আল্লাহু আকবর ...।



তিন.
ঝড়-বৃষ্টি থেমে গেছে।
তাপস অন্ধকারে একা পথ চলতে থাকে। ক্রমে ক্রমে সকালের আলো ফুটে উঠে পৃথিবীর মাঝে।
ভোর হয়। পূর্বদিকে আলোর একরাশ আভা নিয়ে সূর্য ওঠে তার নিজস্ব নিয়মে।
সকালের হালকা কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাস এড়িয়ে সে পথ চলতে থাকে।
এ পথ তার অচেনা।
এ পথে সে কখনো আর আসেনি। যে পথ দিয়ে বাচ্চুর বাড়িতে সে গিয়েছিলো এ পথ সে পথ নয়। সে গিয়েছিলো বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে। আর ফিরেছে অন্য এক অজানা পথ ধরে।

সূর্যের তেজ বাড়তে থাকে ক্রমশ।
তাপস হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় এসে দেখে একটা সদ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকজন নারী ও পুরুষ। তারা আকাশের দিকে হাত তুলে মোনাজাত কোরছে।
সে পেছনের পথ দিয়ে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে সামনে আসে। হঠাৎ কোরেই ঋষির মুখাবয়ব তার সামনে স্পষ্ট হয়।
হাত তুলে বিড় বিড় কোরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনারত ঋষি। প্রার্থনা শেষ হলে তাপসের দিকে নজর পড়ে তার।
চমকে ওঠে সে। তারপর তাপসের কাছে এসে প্রশ্ন কোরে, 'এতো ভোরে? কোথা থেকে এসেছো?'

তাপস কোনো কথা বলে না। মৌনী থাকে। পাশে দাঁড়ানো একজন মধ্যবয়স্ক লোক বলে ওঠে, 'ঋষি লোকটা কে?'
ঋষি উত্তর দেয়, 'এ হলো যীশু। মানবরূপী যীশু। ভোরের পৃথিবীতে আমাদের মাঝে মহান যীশুর আগমন হয়েছে।'
ঋষির অস্পষ্ট উত্তরে সঙ্গীরা কেউ কিছু বুঝতে পারে না। তাকিয়ে থাকে অপলক নেত্রে।
একজোন নারী প্রশ্ন কোরে, 'ঋষি ভাই, আসলে লোকটা কে?'
'অনন্যা ভাবী, এ হলো সবিতার সন্তান। মনে আছে তার কথা? যুদ্ধের সময় তাকে আমার উদ্ধার কোরেছিলাম রাজাকার বাচ্চুর কবল থেকে। সে আমাদের সাথে যুদ্ধ কোরেছিলো। যুদ্ধের পর ....।' থেমে যায় সে।

'যুদ্ধের পর ....?' প্রশ্ন কোরে সবাই। ঋষি কথা বলে না। মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে।
'বলো ...।' একজোন এসে ঋষিকে গা-ঝাড়া দিয়ে প্রশ্ন কোরে।

'আমি বরং সবাইকে পরিচয় কোরিয়ে দেই।' ঋষি বলে। তারপর সে তাপসের সাথে ইরফান, অনন্যা, গণি মিয়া, হামিদ বেপারী, স্বপ্নীল ও মরিয়ম বিবিকে পরিচয় করিয়ে দেয়। বলে, 'তোমার মা সবিতাসহ আমরা সবাই একসাথে যুদ্ধ কোরেছি। আর ওই যে দেখেছো কবরটা, ওখানে শুয়ে আছে অপর্ণা। আমাদের সহযোদ্ধা। রাজাকার বাচ্চু তাকেও যুদ্ধের সময় নির্যাতন কোরেছিলো। আমাদেরকে, দেশকে রক্ষার জন্যে সে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে।'

তাপস সবিস্ময়ে একে একে সবার দিকে তাকায়। তারপর ইরফানের সামনে এসে নিজের কাহিনী তুলে ধরে বলে, 'যুদ্ধের পর আমি জন্মগ্রহণ কোরেছি। আমার পিতা কে, বাইরের কেউ জানে না। আমার মাও আমাকে কোনোদিন বলেনি। মায়ের মৃতু্য হোয়েছে ব্যথার তীব্র দহনে। সে যন্ত্রণার দহন কেউ বুঝতে পারেনি। যখোন বুঝার বয়স হলো তখোন আমার দাদু আমাকে এসব বলেছে। চরম সত্য শোনার পর আমাকেও আমার মায়ের ব্যথা-যন্ত্রণা অাঁকড়ে ধরেছে। যন্ত্রণায় নীল হতে হতে আমি বড়ো হয়েছি। এক সময় অনুভব কোরেছি এ যন্ত্রণামুক্তির। মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে পাইনি।'
ইরফান হাত রাখে তাপসের বাহুতে। তারপর বলে, 'আমরা চেষ্টা কোরেছি যুদ্ধের সময় ওই দুষ্ট ক্ষতটাকে সমাজের বুক থেকে উপড়ে ফেলতে। কিন্তু সে সময় আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি।'
'স্বাধীনতার পর কেনো করোনি?' প্রশ্ন কোরে তাপস।
'তখোন আইনের শেকলে আমরা বন্দী ছিলাম। আইন আমাদেরকে সে সুযোগ দেয়নি। জানতে পেরেছি লোকটাকে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা স্বাধীনতার পর রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। অর্থ লুটপাটের সুযোগ দিয়েছে। সমাজে সে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে মানুষকে বঞ্চিত কোরে জায়গা-সম্পত্তি দখল কোরেছে। আমরা তাকে কোনোভাবেই রুখতে পারিনি।' মনোভারে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ইরফান।
'কিন্তু আমি পেরেছি।' ঘোষণা কোরলো তাপস। 'আমি পেরেছি সে বিষবৃক্ষের মূল উৎপাটিত কোরতে। গত রাতে তাকে আমি খুন কোরেছি। তোমরা যা পারোনি, আমি তা-ই পেরেছি। তোমাদের দায়ভার আমি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছি।'

'তুমি তাকে খুন কোরেছো?' এগিয়ে এসে প্রশ্ন কোরে ঋষি। ইরফানের কান্না থেমে যায়। তার মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের বান।
'হঁ্যা, সে এখোন মৃত। আমি যাচ্ছি, থানায় গিয়ে রিপোর্ট কোরবো। যে দা দিয়ে তাকে খুন কোরেছি তা পুলিশের কাছে জমা দেবো। আমার যেহেতু পিতৃ পরিচয়ই নেই, সেহেতু আর বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। একটা দুষ্টু ক্ষতের রক্তের ধারা পৃথিবীতে আমি বয়ে নিয়ে যেতে চাই না।'

'না।' ইরফান চিৎকার কোরে ওঠে। 'তুমি তা কোরবে না। আমরা যা পারিনি, তুমিই তাই কোরেছো। আমাদের হয়ে তুমি যে কাজ করেছো সেজেন্য তোমাকে অভিবাদন। তার শাস্তি হওয়া দরকার ছিলো। সে শাস্তি পেয়েছে। এটাই বড়ো কথা। তুমি এ প্রজন্মের একজোন যোদ্ধা। তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। তোমাদের মতো যোদ্ধারাই এ সমাজে শান্তির ধারা বয়ে আনবে। তোমাদের মাঝেই আমরা আমাদের ছায়া পৃথিবীতে রেখে যেতে পারবো।'
'তুমি আমাদের সাথে চলো।' কথা বললো ঋষি। 'কেউ তোমাকে কিচ্ছু কোরতে পারবে না। পৃথিবীতে প্রতিদিন কতো শেয়াল-কুকুর মারা যায়। কে তার খবর রাখে? তুমি না হয় তেমন একটা শেয়াল-কুকুরকে মেরেছো, এ আর অন্যায় কী হতে পারে। বরং এটা অন্যায় হোতে পারে যে, আমরা তার বিচার কোনো কোরতে পারিনি! যুদ্ধের সময় যে লোকটা হাজার হাজার নারী-পুরুষকে মেরেছে, নিমর্ম নির্যাতন কোরেছে তার বিচার হয়নি। এটা অন্যায় নয়? আর এ অন্যায়ের বিচার হলো না কেনো?'

'কেনো' শব্দটা আঘাত কোরলো এখানে দণ্ডায়মান প্রত্যেকের বুকে। তারপর সেটি তাদের দেহকে আন্দোলিত কোরে তরঙ্গায়িত হয়ে বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো নিষপ্রভ প্রান্তরে। বাতাস বলে যেতে থাকলো, 'কেনো ... কেনো .... কেনো?
দেশের মানুষরা তাকিয়ে থাকলো 'কেনো'র প্রতিধ্বনির প্রতি। কেউ কোনো উত্তর দিতে পারলো না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # হাতে কলম পেলে আপনি পাগল হয়ে যান--- তাই'না ? এত বড় বড় গল্প লিখেন কি করে ? আসলে বছর বছর আপনার বই প্রকাশ পাবে----এতে কোনো সন্দেহ নাই ।। ধন্যবাদ ।।
সুমন বেশ বড় মাপের গল্প। ভালো লাগল
দুরন্ত পাঠক অসম্ভমব সুন্দর একটি গল্প। খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই।
মিজানুর রহমান রানা দীর্ঘ এই গল্পটা সময় নষ্ট করে যারা পড়লেন, সবাইকে অ-নে-ক ধন্যবাদ।
তাপসকিরণ রায় অনেক বড় লেখা বলে মনে হলো.ঘটনায় একটা ঔত্সুকতা লেগে ছিল.এর পর কি হবে এমনি একটা ভাব পুরো ঘটনার মধ্যেই ছিল.মনে হলো দুটো ঘটনা বলা হলো--পরে তার সামান্য লিংক পাওয়া গেল বটে!কিন্তু সেই লিঙ্ককে ধরতে গিয়ে গল্পের কোনো কোনো অংশ আবার পড়তে হলো.কিছু শব্দে অযথা ওকার মাত্র পড়েছে.যাই হোক,লেখায় প্রাঞ্জলতা আছে.ধন্যবাদ লেখককে.
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পটি পোড়ে খুব ভাল লাগলো বরাবরের মোত এবারের লেখাটাও ভালো হয়েছে .....উচ্চারণ রীতির ক্ষেত্রে আমিও আপনার মোত এই রীতিটায় স্বাচ্ছন্দ বোধ কোরি রানা ভাই আপনাকে অসংখ্য মুবারকবাদ.....
আহমেদ সাবের দুটো অসাধারণ গল্প পেলাম। তবে, দারুণ কুশলতায় দ্বিতীয় গল্পের শেষ দিকে তাদের সবাইকে একত্র করেছেন। বানান রীতির ব্যাপারে লুতফুল বারি পান্নার কথাগুলো ভেবে দেখতে পারেন। আপনার উপন্যাসের প্রতীক্ষায় থাকলাম।
তানজিয়া তিথি খুবই বড় মাপের গল্প । পুরোটা পড়তে পারিনি ভাই ; অন্য এক সময় পড়ে নেব । অনেক ধন্যবাদ ।
মিলন বনিক রানা ভাই...এই কেনর প্রতিধ্বনি এখনো শেষ হয় নাই...এখনো আকাশে বাতাসে দ্বানিত হচ্ছে...খুব ভালো লাগলো...পুরো উপন্যাসটা পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম...অনেক শুভ কামনা....
Lutful Bari Panna অ্যানাদার ডেলিসাস অ্যান্ড টাচিং স্টোরি। এ গল্পের প্রসঙ্গে আর কোন কথা নেই। বানান রীতি নিয়ে ছোট্ট একটু কথা আছে। 'করে' যদি অসমাপিকা হয় তবে তার উচ্চারণ হয় 'কোরে'। আপনি যদি উচ্চারণ রীতি অনুযায়ী বানান রীতি ঠিক করেন তাহলে যেখানে করে হবে সেখানেও আপনি কোরে লিখেছেন। যেমন 'ভালোবেসে সে তার সৃষ্টি-চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ কোরে।'- এই লাইনে 'কোরে' উচ্চারণ রীতি অনুযায়ী হবে 'করে'। আপবার উচ্চারণ রীত অনুযায়ী বানানে আরো অনেক ক্রিয়াপদে ও শব্দে ও কার যুক্ত হবে। যেমন- "পুরোটা না পড়েই বললো'- এখানে উচ্চারণ রীতিতে 'পড়েই' না হয়ে 'পোড়েই' হবে। আর যদি এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বানান রীতি হয় তবে সেটা আমার অজ্ঞাত। একটু ব্যাখ্যা করলে বুঝতে সুবিধা হত। এছাড়াও সেখানেও কিছু অসঙ্গতি আছে- কোথাও 'কোরলো' লেখা হয়েছে, কোথাও 'করল'। সে যাক গল্পটি অসাধারণ এটাই আসল কথা।

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪